দেশ থেকে শুরু করে বিদেশে সমস্ত জায়গাতেই প্রতিনিয়ত হৃদরোগের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন অনুসারে, প্রতিবছর প্রায় ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক সহ হৃদরোগের কারণে ঘটে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে তবে আজকাল অনেক কম বয়সীদের মধ্যেও কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে নানান রকম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মারা যাওয়া বেশিরভাগ লোকের বয়স ৬৫ বা তার বেশি। উপরন্ত যাদের হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের এটি হয়ে যাওয়ার ঝুকি আরও বেশি। আবার মহিলাদের তুলনায় দেখা যায় পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। যদিও সমস্ত ঝুঁকি পরিবর্তন করা যায় না তবে কিছু লাইফস্টাইল বা স্বাভাবিক অভ্যাস কম করে আপনারা কিন্তু হার্ট অ্যাটাক (heart attack)কে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।
আপনিও যদি এই হার্ট অ্যাটাকের ( heart attack) ঝুঁকি কমাতে চান তাহলে নিম্নলিখিত কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:
১) ধুমপান ত্যাগ করা:
ধুমপান আমাদের রক্ত প্রবাহের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ এবং করোনারি আটারির ডিজিটের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ। এর কারণে ধমনীতে ফ্যাট জমা হয়। ধূমপানকারী ব্যক্তিদের যদি আগে থেকেই হৃদরোগ থাকে তাহলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে আপনি চাইলে এটিকে সহজেই পরিবর্তন করতে পারেন। সহজে পরিবর্তন করতে না পারলে আপনারা চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে সফল হতে পারেন।
২) শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি:
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপ যেমন ব্যায়াম বা যোগ ব্যায়াম একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মূল ভিত্তি। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হেল্থ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস থেকে একটি নির্দেশিকা জানানো হয়েছে যে প্রতি সপ্তাহে যদি আপনার ১৫০ মিনিটের মাঝারি তীব্রতার বায়বীয় ব্যায়ামের লক্ষ্য থাকে যেমন দ্রুত হাঁটা তাহলে কিন্তু হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
উপরিউক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও আপনারা চাইলে নিজেদের খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক একটি সুস্থ হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য আপনারা কি কি করতে পারেন!
১) প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খান:
প্রতিদিন অন্তত পাঁচটি ফল এবং পরিমাণ মতো সবজি আপনাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। খেয়াল রাখবেন এই খাবারগুলোর মধ্যে যেন আপনি সঠিক পরিমাণে পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পান। তাহলেই হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
২) ফাইবার সমৃদ্ধ শস্য এবং লেগুম:
এই শস্যভিত্তিক তালিকায় রয়েছে ওটমিল, ব্রাউন রাইস এবং রুটি। অন্যদিকে লেগুমের মধ্যে রয়েছে শুকনো মটরশুঁটি, ছোলা মসুর ডাল। এই প্রত্যেকটি খাবারই কিন্তু আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত বেশি রকমের সাহায্য করে থাকে।
৩) চর্বিহীন মাংস এবং চর্বিযুক্ত মাছ:
অবশ্যই আপনাকে খাদ্য তালিকায় চর্বিহীন মাংস এবং চর্বিযুক্ত মাছ রাখতে হবে। ফ্যাটি মাছের জাত ওমেগা তিন ফাটি এসিড সমৃদ্ধ যার মধ্যে রয়েছে স্যামন, টুনা এবং ট্রাউট।
৪) বাদাম ,বীজ এবং তেল:
স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া অবশ্যই আপনাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে এই চর্বি গুলোর ভালো উৎস গুলোর মধ্যে রয়েছে চিনা বাদাম,তিল, কুমড়ো এবং সূর্যমুখী বীজ, অ্যাভোকাডো, ক্যানলা, জলপাই, কুসুম এবং সূর্যমুখী তেল।
Read More: Weight Loss Tips : জল খেলেই কমে যাবে ওজন, শুধু জানতে হবে আসল কায়দা
৫) লবণ এবং সোডিয়াম সীমিত করুন:
বেশিরভাগ মানুষের ডায়েটেই সোডিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে নানান রকমের প্রক্রিয়াজাত খাবার। টিন জাত বিভিন্ন স্যুপ,সস, ডেলি মিট বা রুটি, এই সব কিছুতেই কিন্তু সোডিয়াম থাকে।
৬) অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট:
অবশ্যই আপনাদের স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট ডায়েটে সীমিত করতে হবে। খাবারে ট্রান্স ফ্যাট ধারণ করে আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল দিয়ে তৈরি করা খাবার যা সবসময় এড়িয়ে চলা উচিত।
৭) চিনির পরিমাণ কমান:
চিনি বা কোন রকমের সিরাপ অবশ্যই দূরে রাখুন। সুক্রোজ গ্লুকোজ মধু এবং ম্যাপল সিরাপ সহ যুক্ত সর্করা অনেক রকমের রূপ নেয়।। এছাড়াও বিভিন্ন মিষ্টি পানীয় এবং প্যাকেট স্ন্যাকস পেস্ট্রি এবং ক্যান্ডি গুলো শর্করার প্রধান উৎস।